মহাভারত

মহাভারত

 মহাভারতে যা আছে তা অন্যত্র থাকতে পারে কিন্তু যা মহাভারতে নেই তা কোথাও নেই। মহাভারত এত বিরাট এবং বিশাল যে তা সমগ্র হিন্দু পুরাণ, চতুর্বেদ, সমগ্র হিন্দুধর্মশাস্ত্র একদিকে আর অন্যদিকে মহাভারত।


মহাভারতে একলক্ষ শ্লোক রয়েছে। এই বিশাল গ্রন্থ পাঠ করতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। 


মহাভারতের অনেকগুলো বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায়: সবই কাব্যে লেখা। রাজশেখর বসু গদ্যে অনুবাদ করেছেন। সহজ সাবলীল প্রাঞ্জল এবং চলিত ভাষায় লিখেছেন তিনি। তথাপি, তাঁর অনুবাদ অসাধারণ লেগেছে। বিশেষ করে শব্দচয়ন অসাধারণ। ছয়'শ পৃষ্ঠার মধ্যে তিনি সমগ্র মহাভারতের মূলত সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন। এতে পাঠকের পড়তে সুবিধা হয়। 


মহাভারত পৃথিবীর আদিমতম গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম। মহাভারতের অলৌকিক বিষয়গুলো বাদ দিলে এটা একটা জাতির মহামূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমনটি বলেছেন, এটা একটা জাতির স্বরচিত ইতিহাস। বহু কীর্তিকথা কবিগণ লিখতে গিয়ে অলৌকিকতার আশ্রয় নিয়েছেন। আধুনিক যুগেও রাজা-বাদশা কিংবা শাসক বা যুদ্ধের কাহিনীতে অনেক অলীক কল্পনাপ্রসূত ঘটনা ঢুকে পড়ে। খুব খেয়াল করলে দেখা যায় অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগেও সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা কোনো ঘটনা নিয়ে মিথ তৈরি করে ফেলি। বেশিরভাগ লোকে সেই মিথ বিশ্বাস করতে থাকে। কিছু মানুষ যুক্তি দিয়ে বিচার করে; বেশিরভাগই করে না। মহাভারতের ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে হয়তো এরকমই ঘটে থাকতে পারে। কিছু বর্ণনার ক্ষেত্রে আমরা যেমন রূপক উপমান উপমেয়র আশ্রয় নিই, মহাভারতেও তেমন নেয়া হতে পারে। যেমন ভীমের শক্তির কথা বলতে গিয়ে অনেক জায়গাতে সহস্র হস্তীর শক্তির তুল্য বলা হয়েছে। এগুলো কাব্যাশ্রয়ী তুলনাই। 


মহাভারত পড়লে তৎকালীন সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা, ধর্ম, জীবনাচার সম্পর্কে জানা যায়।


মহাভারতে অঙ্গ বঙ্গ পুন্ড্র কলিঙ্গ অন্ধ্র দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। বঙ্গ দেশের উল্লেখ আছে অন্তত দশাধিক জায়গায়। বঙ্গাধিপতি পাণ্ডবদের পক্ষে ছিলেন না। তিনি দশ সহস্র সৈন্য এবং হস্তীযুথ নিয়ে কৌরবদের পক্ষে ছিলেন। আঠারো দিন ব্যাপী ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রের  যুদ্ধের অষ্টম দিবস এবং ষোড়শ দিবসের যুদ্ধে বঙ্গ দেশের যুদ্ধের কথা পাওয়া যায়। তাছাড়া, অশ্বমেধ যজ্ঞের সময়ও অর্জুন বঙ্গ দেশ ভ্রমণ করেন। অশ্বমেধপর্বাধ্যায় অংশে বঙ্গদেশকে স্লেচ্ছ দেশ বলা হয়েছে। এর আগে দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভা, যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞের সময় বঙ্গ দেশের কথা বলা হয়েছে। 


মহাভারতে কীভাবে রাজ্যপরিচালনা করতে হবে, রাজার ভূমিকা কী হবে, কীভাবে প্রজাপালন করতে হবে, কিসে রাজ্যের উন্নতি হবে, সামাজিক নিরাপত্তা, রাজ্য পরিচালনার কূটকৌশল, কূটনীতি, যুদ্ধনীতি, মিত্রতার নীতি, শত্রুতার নীতি, দুর্নীতি প্রতিরোধ, রাজ কর্মচারী নিয়োগ, সৈন্য নিয়োগ, রাষ্ট্রদূত প্রেরণ, যুদ্ধক্ষেত্রে মানবাধিকারের প্রয়োগ প্রভৃতি পাওয়া যাবে। 


এককথায় অসাধারণ একটা বই। মহাভারত যে যেভাবে পড়তে পারে সেভাবেই এর থেকে আনন্দ পেতে পারে। এতে যেমন আছে প্রচুর ধর্মীয় আখ্যান তেমনি এটা এক মহান সাহিত্যসৃষ্টি। মহাকাব্যটি একটি ট্রাজেডি। বিয়োগাত্মক কাহিনী; মিলনাত্মক নয়। ট্রাজেডি হওয়ার কারণে এটি আরও বেশি পাঠপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 


সমগ্র মহাভারত নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আমি শুধু রাজশেখর বসুর গদ্যানুবাদ সংক্ষিপ্ত মহাভারত পাঠের অনুভূতি ব্যক্ত করলাম। 


যাদের আগ্রহ আছে তারা পড়তে পারেন।

Post a Comment

0 Comments