বাংলা স্ল্যাং সমীক্ষা ও অভিধান
"বাংলা স্ল্যাং সমীক্ষা ও অভিধান" বইটা বাংলাভাষায় বিশেষ করে কলকাতা কেন্দ্রিক বাংলাভাষায় স্ল্যাংয়ের ব্যবহার বিবর্তন ও ব্যুৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটির লেখক অভ্র বসু। বইটি ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
স্ল্যাং কী কত প্রকার এবং কী কী জানতে বইটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। স্ল্যাং যে সব সময় গালি বুঝায় তাও না। অপ্রচলিত অর্থেও স্ল্যাং ব্যবহৃত হয়। আপাত দৃষ্টিতে স্ল্যাংকে বাগধারা, Cant, Jargon প্রভৃতি মনে করা হলেও স্ল্যাংয়ের রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য।
বাংলাভাষার একটা সমৃদ্ধতম উপাদান হলো স্ল্যাং। অথচ স্ল্যাংয়ের সর্বজনগ্রহনযোগ্য কোনো বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। যখন যে বই লিখেছে তখন সে নিজের মতো প্রতিশব্দ ভেবে নিয়েছে।
স্ল্যাংকে বলা হয় সাধারণ মানুষের কবিতা। স্ল্যাং শুধু অশিক্ষিত গ্রাম্য লোকজনই ব্যবহার করে না। শিষ্ট লোকজনও ব্যবহার করে। স্ল্যাং রাগ প্রশমিত করতে সহায়তা করে। স্ল্যাং মানুষের প্রাত্যহিক ভাষার মতো হয়ে পড়েছে। স্ল্যাংয়ের সাথে যৌনতা বিষয়টা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
স্ল্যাং যেমন মানুষের নিত্যদিনের ভাষা তেমনি সাহিত্যেও এর প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
চর্যাপদে স্ল্যাংয়ের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। ৩৭ সংখ্যক পদে বাণ্ড শব্দের ব্যবহার আছে। এটাই তদ্ভবে এসে বাঁড়া হয়েছে। মধ্যযুগের সাহিত্যেও সচেতনভাবে না হলেও স্ল্যাং ব্যবহৃত হয়েছে। কবিগান এবং দাশরথী রায়ের পাচালিতে স্ল্যাংয়ের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে কবিগানের খেউর তো গালাগালি ছাড়া কিছুই নয়।
আধুনিক যুগের শুরুতে কথ্যভাষার ব্যবহারের কারণে স্ল্যাং স্বাভাবিকভাবেই চলে এসেছে। বাংলাভাষার প্রথম মুদ্রণকৃত গদ্য কৃপারশাস্ত্রের অর্থভেদে মাগি এবং ভাতার শব্দটা এসেছে। এবং ধারণা করা হয় মাগি ভাতার এবং মিনসে এই শব্দত্রয় সেসময় সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক ভাষাই ছিল। কালক্রমে এটা ভদ্রসমাজে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে। হুতুম পেঁচার নকশা, আলালের ঘরে দুলাল, বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রো, জমিদার দর্পণ নাটকে স্ল্যাং ব্যবহৃত হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্ৰভাবতীসম্ভাষণ বইয়েই স্ল্যাং পাওয়া যায়।
বঙ্কিম এবং রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ভিক্টরিয়া যুগের প্রভাবে প্রভাবান্বিত। এঁরা বিশুদ্ধ সাহিত্য রচনা করতে চেয়েছেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনাতে তাও নারী চরিত্রের মুখে কিছু স্ল্যাং লক্ষ করা যায় কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ল্যাংয়ের দৌড় সর্বোচ্চ শালা পর্যন্ত। অন্যান্য নাট্যকার যেমন গিরিশ চন্দ্র ঘোষের নাটকে কথ্যভাষা এবং স্ল্যাং পরিলক্ষিত হয়।
স্ল্যাং ভাষার একটি উপাদান। বিশ্বের অনেক ভাষায় স্ল্যাং অভিধান আছে। ইংরেজি ভাষায় স্ল্যাংয়ের অভিধান আছে ষোড়শ শতাব্দী থেকে। বাংলাভাষায় অতি সম্প্রতি গালি অভিধান নামে একটা অভিধান প্রকাশিত হয়েছে।
আলোচ্য বইটি যথেষ্ট সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের গালি অভিধানের সাথে এর পার্থক্য হলো এই বইটিতে অভিধানের সাথে সমীক্ষাও আছে যা খুবই কাজের। ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সম্পর্কে জানতে পড়ে ফেলুন বইটি।
0 Comments