সোফি'স ওয়ার্ল্ড (তৃতীয় এবং শেষ অংশ)
হেগেল রোমান্টিক এজের শেষ দার্শনিক। এরপর চলে আসে ঊনবিংশ শতাব্দী। তিনজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ঊনবিংশ শতাব্দীর দার্শনিক চিন্তাকে প্রভাবিত করেছেন। এঁরা হলেন কার্ল মার্ক্স, চার্লস ডারউইন এবং সিগমান্ড ফ্রয়েড।
কার্ল মার্ক্স একাধারে দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদ ছিলেন। কার্ল মার্ক্সের দর্শনচিন্তা ছিল বস্তুবাদ। কিন্তু তাঁর বস্তুবাদ প্রাচীন প্রকৃতিবাদীবাদী দার্শনিকদের সবকিছুর উৎস এটমের মত ছিল না।
আবার তিনি সপ্তম শতাব্দীর দার্শনিকদের মত ভাবতেন না সবকিছুই মেশিন। তাঁর বস্তুবাদ ছিল মূলত, তিনি বিশ্বাস করতেন বস্তুবাদী উপাদান যা মানুষের চিন্তাকে এবং ইতিহাসকে প্রভাবিত করে।
মার্ক্সের বিখ্যাত বই ডাস ক্যাপিটাল। এখানে তিনি শ্রেণী সংগ্রামের কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন সংগ্রাম শ্বাশত।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে সংগ্রামের কথা বলেছেন আরও একজন। তিনি হলেন চার্লস ডারউইন। মার্ক্স সামাজিক সংগ্রামকে গুরুত্ব দিয়েছেন; ডারউইন গুরুত্ব দিয়েছেন প্রাকৃতিক সংগ্রামকে। ডারউইনের কথা, প্রত্যেক প্রাণীকে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে হলে সংগ্রাম করতে হয়। যারা জিতে যায় তারাই টিকে থাকে। কার্ল মার্ক্স এবং ডারউইন প্রায় সমসাময়িক। ডাস ক্যাপিটাল বইটা মার্ক্স ডারউইনকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ডারউইন সম্মতি দেননি।
১৮৫৯ সালে The Origin of Species নামে ডারউইন একটা বই লেখেন। সেখানে তিনি বলেছেন পৃথিবীর সব উদ্ভিদ এবং প্রাণী আগের কোনো আদিম উদ্ভিদ কিংবা প্রাণী জৈবভাবে বিবর্তিত হয়েছে। এবং এই বিবর্তন ঘটেছে প্রাকৃতিক চয়নের (natural selection) এর মাধ্যমে। ডারউইনের আগেও ফরাসি প্রাণীবিদ ল্যামার্ক বিবর্তনবাদের ধারণা দিয়েছিলেন। এমনকি ডারউইনের দাদু এরাসমাস ডারউইন বিবর্তনবাদ ধারণা পোষণ করতেন। কিন্তু ডারউইন যেটা করেছেন সেটা প্রমাণসহ এবং গবেষণালব্দ। দি অরিজিন অফ স্পেসিজ তখনকার ইউরোপে ব্যাপক সাড়া ফেলে। চার্চ এবং পাদ্রীরা বিদ্রোহ করে কারণ বাইবেলে এবং উদ্ভিদ সম্পর্কে বলা আছে এটা অপরিবর্তনীয়। কিন্তু ডারউইন বিবর্তনের কথা বলেছেন।
১৮৭১ সালে ডারউইন The Descent of Man বইটি প্রকাশ করেন। এটাও সে সময় অনেক বেশি বিতর্কের জন্ম দিলেও আগের চেয়ে প্রতিক্রিয়া ছিল কম। মানুষ বুঝতে শিখেছিল।
পরবর্তীতে জীববিজ্ঞান আরও উন্নত হলে ডারউইনের তত্ত্বের সত্যতা আরও বেশি প্রতীয়মান হয়। বিশেষ করে কোষের মিউটেশনের মাধ্যমে এর সত্যতা প্রমাণ করা যায়।
ডারউইন এবং কার্ল মার্ক্সের যখন মধ্য বয়স তখন ১৮৫৬ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় সিগমান্ড ফ্রয়েডের জন্ম হয়। তিনি পেশায় চিকিৎসক হলেও মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ধারণা দিয়ে গেছেন। তাঁর বিখ্যাত বই The Interpretation of Dream সারাবিশ্বে আলোড়ন তোলে। বিতর্কের যে জন্ম দেয় না সেরকম নয়। তিনি বলেছেন মানুষ সব সময় Rational চিন্তা করতে পারে না। আগের বেশির ভাগ দার্শনিকদের ধারণা ছিল মানুষ Rational চিন্তা করে। ফ্রয়েড দেখালেন মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রে unconscious একটা ফ্যাক্টর কাজ করে। এই অবচেতনতা তখনকার ইউরোপের সাহিত্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। surrealism বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা এই unconscious সত্ত্বা থেকেই আসে। অবশ্য, ফ্রয়েডের আগে থেকেই ইউরোপের সাহিত্যে surrealism বিষয়টা উঠে এসেছিল। ফ্রয়েড মানুষের স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে unconscious ফ্যাক্টরকে দায়ী করেছেন।
এরপরের আসে বিংশ শতাব্দী। বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মানুষকে অভিভূত করে। বিংশ শতাব্দীর দুটি বিস্ময়কর আবিষ্কার কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব। মানুষ এই শতাব্দীতে এসে ধারণা করতে শেখে মহাবিশ্ব আজ থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে জম্ম নেয়। এবং এটা এখনো প্রসারণশীল। হয়তো কয়েক হাজার মিলিয়ন বছর পরে এটা আবার সংকুচিত হতে শুরু করবে। তখন আমরা থাকব না। কারণ আমরা মূলত কারোর চিন্তার মধ্যে রয়েছি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
Life is one big lottery in which only winning numbers are visible.
0 Comments